Friday 1 June 2018

ছড়াঃ- ১৭

বজ্রপাত 
" অধ-পতন "
কিশোর দুলাল রায়

হারিয়ে গেছে মান্যতা আর
হারিয়ে গেছে স্বজন,
বুড়ো বাবার করবে যতন
এমন আছে ক'জন।
গুরুজনদের শ্রদ্ধা-ভক্তি
কমে গেছে আজ,
মা-বাবাকে ছোট করে
চলে অশ্লীল কাজ।
বিচার বৈঠক সবই আছে
সঠিক বিচার নাই,
নেশার জন্য ছেলে ভাবে
টাকা কোথায় পাই।
নেশাগ্রস্ত ছেলে আজ
নেশাগ্রস্ত সমাজ,
ছেলে-মেয়ের দুঃচিন্তায়
বাবার মাথায় বাজ।।

 বিঃদ্রঃ

গল্প, ( দুঃসময়ের বন্ধু )

এই গল্পটি ২৮শে ফেব্রুয়ারী ২০১১ইং ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত ।
গল্পঃ
 " দুঃসময়ের বন্ধু "
কিশোর দুলাল রায়

 শীতের সকাল,কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে আর চারদিক ছেয়ে গেছে ঘন কুয়াশায়,চালের উপর থেকে টুপটাপ ঝরে পড়া শিশিরের ছন্দ আর বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো শেফালী আর বেলী গাছ থেকে ভেসে আসছে সেই ফুলের সুরভিত গন্ধ । ডিসেম্বর মাস স্কুলের বার্ষিক পরিহ্মাও শেষ । তাই স্কুল বন্ধ । ১লা জানুয়ারি থেকে ক্লাস আরম্ভ হবে ।তাই ছুটি কাটাবার জন্য কিশোর,তিথি,দীপা,প্রীতি সবাই মিলে গেলো মামার বাড়ি বেড়াতে । সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সবার নাকের ডগায় এসে পৌঁছালো পিঠাপুলি আর খেজুরের গুড়ের ঘ্রাণ ।দিদি ভাই ওদেরকে ডাকার সাথে সাথেই ওরা বিছানা ছেড়ে আসলো চুলোর পাড়ে । এসে দেখলো মেজো মামী পিঠা বানাচ্ছে আর ওনাকে সাহায্য করছে ওদের ছোট আন্টি নীলা । তারপর ওরা দাঁত ব্রাশ করে হাত-মুখ ধুয়ে আসলো । ওদের মামী সবাইকে পিঠা দিলো । সবাই মিলে খুব আনন্দের সাথে পিঠা খাচ্ছে । এর মধ্যে এলো ওর বড় মামা । এসে উনি কিশোরকে বললেন, ওনার সাথে বাজারে যাওয়ার জন্য।কিশোরও প্রস্তুত । পিঠা খাওয়া শেষে বাজারের ব্যাগ নিয়ে মামা- ভাগিনা মিলে গেল বাজারে । তিথি ওর দিদি ভাইকে বললো গ্রাম ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য। তখন কুয়াশা কেটে পূর্ব দিগন্তে সূর্যের উদয় হয়েছে মাত্র,কিন্তু তখনও ঠাণ্ডা বাতাস তার আপন গতিতেই বইছিলো।দীপা,দিদি আর প্রীতিকে নিয়ে বের হলো তিথি । সড়কের উপর দাঁড়িয়ে তিথি নির্বাক হয়ে দেখতে পেল সবুজের বুকে হলুদে ছেয়ে যাওয়া এক নব দিগন্ত। সরষে ফুলে ছেয়ে আছে কৃষকদের ফসলের মাঠ আর তার ওপরে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছির ঝাকঁ। সড়কের দু'পাশে গাছের ফাঁকে ফোটা হলুদ গাঁদাফুল।তার ওপরে বসেছে প্রজাপতির মেলা । চারদিকে তাকিয়ে তিথির কাছে মনে হলো আজ প্রকৃতির গায়ে হলুদ,তাই হয়তো এতো সাজসজ্জা ।এ রকম সুন্দর দৃশ্য দেখে তিথি তো একেবারে আনন্দে আত্মহারা । প্রীতি,দীপা দিদার সাথে হাঁটছে। তিথি একটু পিছনে পড়ে আছে। কিছু দূর সামনে এগুতেই তিথি সামনের নদীটাকে লহ্ম্য করলো । সেখানে চলছে ছোট ছোট কতগুলো ট্রলার আর জেলেদের কিছু মাছ ধরার নৌকা ।নদীর পাড়ে আরও ছিলো বাতাসের সাথে দোল খাওয়ানো কিছু কাঁশফুল । নৌকায় ওঠার শখ জাগলো তিথির,সাথে সাথে দীপা,প্রীতিও উত্সাহিত হয়ে উঠলো । পরে ওদের দিদা ওদেরকে নিয়ে নৌকায় উঠলো ।নৌকায় উঠতে পেরে ওরাও আনন্দিত ।ঐ দিকে কিশোর বাজার করা শেষে মামার সাথে বাড়ি ফিরলো । ব্যাগে করে মাছ তরিতরকারি আর একটি জগে করে দুধ নিয়ে আসলো । যদিও বাড়িতে গরু ছিলো তবুও বাজার থেকে দুধ আনতে হলো,তার কারণ বাড়িতে যে গরু সেটার এখনো দুধ দেয়ার সময় হয়নি । কিশোরের বড় মামি সদাইগুলো ঘরের ভেতরে নিয়ে রাখলো আর এ সময় ওর দিদা এসে বসলো মাছ কাটতে । সাথে বসলো তিথি । প্রীতিও দীপা বাড়ির আঙ্গিনায় এক্কা-দোক্কা খেলছিল ।এরপর ওরা সবাই গিয়ে নদীতে গোসল করে আসলো ।রান্না শেষে ওদের দিদা ওদেরকে খাওয়ার জন্য ডাকলো । সবাই এসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করলো । দুপুর গড়িয়ে বিকেল,সন্ধ্যা । তারপর রাত হয়ে গেল । রাতের খাবার শেষে ওরা লেপ-কম্বল নিয়ে ঘুমিয়ে রইলো । পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলো কিশোর ।তারপর দেখলো ওদের মামা ওদের জন্য মাটির হাঁড়িতে করে খেজুরের রস নিয়ে এসেছে । মুখ ধুয়ে এসে সবাই রস পান করলো ।পরে ওরা সবাই মনের খুশিতে শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটতে বের হলো ।পথেই তাহের নামে একটি ছেলের সাথে ওদের বন্ধুত্ব হলো ।তাহের কিশোরকে তার বাড়ি নিয়ে গেল । বাড়িতে ছিলো ওর ছোট বোন মরিয়ম ।ওদের বাবা একজন গরীব দিনমজুর । কিশোর,তিথি,দীপা ,প্রীতি ওরা তাহেরের বাড়িতে গিয়ে দেখলো ওরা একটি মাটির তৈরি ছনের দু'চালা ঘরে থাকে । এরপর কিশোর লহ্ম্য করছে তাহের শীতে কাঁপছে ।তা দেখে কিশোর ওর গায়ের সোয়েটার খুলে তাহেরকে পরিয়ে দিলো । তাহের অবশ্য নিতে চাইছিলো না, তবুও কিশোর জোর করেই দিলো। তিথিও ওর গায়ের চাদরটা খুলে দিলো মরিয়মকে । এরপর কিশোর ওর বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা আনলো বন্ধুকে দেওয়ার জন্য । কিন্তু তাহের এটাকে করুণা মনে করে ফিরিয়ে দিতে চাইলো । তার পরে কিশোর অনেক বুঝিয়ে বললো নে না,ব্যবসা করে লাভ হলে না হয় আমার টাকা আমাকে দিয়ে দিবি । এই কথা বলার পর কিশোরের কাছ থেকে তাহের হাসি মুখে টাকাটা নিলো । সেই টাকা দিয়ে জমিতে ফসল ফলিয়ে ওদের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসলো । দূর হয়ে গেল ওদের দুঃখ । পরে তাহের কিশোরকে ওর দেয়া টাকা ফিরিয়ে দিলো । আর দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য প্রকৃত বন্ধু বানিয়ে নিলো । কিশোরও তখন বুঝতে পারলো শুধু নেয়াতে না,মানুষকে কিছু দিতে পারাটাও যে কতো আনন্দের । ছুটি শেষ,তাই ওরা মামার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে সবাই বাসায় ফিরে গেল ।
                                                   Sr.dulalray@yahoo.com

গল্প, ( বর্ষাকালে )

এই গল্পটি ১৯শে জুলাই ২০১০ইং দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত ।
গল্প
★বর্ষাকালে★
 কিশোর দুলাল রায়

চারোদিকে বর্ষার অথই জোয়ারের জল।সেই জলে ভাসে কুটি কুটি হয়ে ঝরা হাজারো কদমের ফুল।আর ভেসে বেড়ায় সরু গলা তুলে রাজ হাঁসের পাল।বর্ষার জল দিয়েই নৌকা নিয়ে স্কুলে গেল রবি,চৈতালী,ও অর্চনা । গিয়ে দেখলো মনি আজও স্কুলে আসেনি।স্কুল ছুটি হবার পর রবি,চৈতালী ও অর্চনা নৌকায় এসে বসলো।এখন বর্ষাকাল তাই নৌকাটি স্কুলের সামনে একটি বড় সৃষ্টি গাছের নিচে মাঠেই বাধা ছিলো।ওরা বসে আছে শান্তর আসার অপেক্ষায়। আজ শনিবার,গাঁয়ে হাট-বাজার মিলেছে আজ। তাই শান্ত স্কুল ছুটি হবার পর গিয়েছে ওর মামার কাছে কিছু বাজার-সদাই কিনে আনার জন্য । অবশেষে শান্ত বাজার-সদাই করে নিয়ে আসলো নৌকার কাছে।সদাইগুলো নৌকার মধ্যে নামিয়ে রাখলো।আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে।যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে।তাই চৈতালী শান্তকে বলে জলদি করে আয় তা না হলে যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে।তাই চৈতালী শান্তকে বলে জলদি করে আয় তা না হলে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে।ওই দিকে রবিটা আবার বাজারে গিয়েছে আঁখ কিনে আনার জন্য । তাই আবারো রবির জন্য বসে থাকা।মনি,রবি,চৈতালী,অর্চনা,শান্ত এরা সবাই একে অন্যের ক্লাসমেট । রবিটার আসতে দেরি দেখে অর্চনা শান্তকে বলে,আমাকে একটি অংক খাতা এনে দেনা।কি আর করা শান্ত যাচ্ছে খাতা কিনতে।যাবার সময় চৈতালীও বলে দিলো,শান্ত আসার সময় সাথে একটি পলিথিন ব্যাগ আনিস যদি বৃষ্টি আসে।পথের মধ্যেই দেখা হলো শান্তর সাথে রবির।আঁখ নিয়ে আসছিলো রবি।শান্ত বলে তুই নৌকায় গিয়ে বস আমি আসছি।রবি চলে গেল নৌকায় আর শান্ত খাতা আনতে।অতঃপর এলো শান্ত উঠলো নৌকায় । রবি নৌকার বান খুলে নৌকা ছাড়লো । নদীর কূল ঘেঁষে নৌকা বাইতে লাগলো শান্ত।সামনে বৈঠা টানছে রবি।অর্চনা আর চৈতালী নৌকার মাঝে মাচায় বসে আছে।ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি ঝরছে।চৈতালী পলিথিন ব্যাগে বইগুলো ভরে রাখলো।তারপর সামনেই বর্ষার জোয়ারের জলে ভাসা শাঁপলাগুলো দেখতে পেল।অর্চনার সখ জাগলো শাঁপলা তোলার সাথে চৈতালীরও।দু'জনেই শাঁপলা তোলার জন্য উৎসাহিত হয়ে উঠলো।এরপর নৌকায় বসেই যে যার ইচ্ছে মতো শাঁপলা তুলে নিলো।শাঁপলাগুলো ছিলো বেশ বড় আর মোটা,তাই ওরা সবাই খুব আনন্দ অনুভব করলো।অর্চনা একটি শাঁপলা হাতে নিয়ে মালা তৈরি করলো।খানিক বাদেই ওরা এসে পৌছালো মাঝ নদীতে । অনেক জোরে প্রবল বেগে বাতাস ছাড়লো।নদীতে প্রচুর ঢেউ।রবি,অর্চনা আর চৈতালীকে উদ্দেশ্য করে বলে এখন যদি নৌকা ডুবে যায়।এই কথাটা শুনতেই ধক করে কেঁপে উঠলো চৈতালীর বুকটা।কারণ সে সাতার জানে না।যদি সত্যিই ডুবে যায় তাহলে উপায় কি? এরই মধ্যে কোথা এক ঢেউ এসে ওদের নৌকার সাথে ধাক্কা খেয়ে বয়ে গেল ওদের মাথার উপর দিয়ে।চৈতালী ভয়ে কেঁদে ফেললো।অর্চনা এসে ওকে ধরে বসলো।রবি আর শান্ত চৈতালীকে সান্তনা দিয়ে বললো,আরে তুই কাঁদছিস কেন? আমরা আছি না কিছুই হবে না তোতোর।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পাড়ে চলে যাব।চৈতালী কিছুটা আশ্বাস পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।শান্ত আর রবি আরও জোরে বৈঠা বাইতে লাগলো কিন্তুু বাতাসের জন্য ওরা নৌকা নিয়ে সামনে এগুতে পারছিলো না।জোরে বৃর্ষ্টি হওয়াতে ওদের নৌকায় প্রচুর পানি জমে গেল যা সেচার জন্য কোন পাত্র ওদের নৌকায় ছিলো না।যার কারণে নদীটি পার হবার পর বাড়ির পাশে কোমর জলে এসে নৌকাটি ডুবে গেল।রবি,শান্ত,অর্চনা,চৈতালীকে টেনে এনে শুকনা জায়গায় দাঁড় করালো।বাড়ি থেকে মনি এসব দেখতে পেল আর বাড়ি থেকে একটি পানি সেচার পাত্র নিয়ে গেল ওদের সাহায্য করার জন্য।তারপর নৌকার পানি সেচা শেষে ওরা নৌকা নিয়ে ডাঙ্গায় ফিরে এলো।সবাই কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নিলো।রাতে চৈতালীর ভীষণ জ্বর ওঠলো।রবি,শান্ত,অর্চনা এদের সবার হাঁচি আর সর্দি লেগে গেল।ডাক্তারের ওষুদ খেয়ে ওরা ভালো হলো।তারপর সবাই মিলে চৈতালীকে সাঁতার শেখালো।যাতে করে পানিতে গিয়ে আর কোনদিন কোন বিপদের সম্মুখীন হতে না হয়।সাঁতার শিখে চৈতালীর মন থেকেও পানিতে নামার ভয় দূর হলো।এখন আর নদীর পানিতে নামতে ওর কোন বাধা নেই।প্রতিদিন সবাই একসাথে নৌকা নিয়ে স্কুলে যায়।এখন ওরা বর্ষার বৃর্ষ্টি , ঝড়,বাতাস সব কিছুই জয় করতে পারে।এর কারণ ওদের মনে আর আগের মতো কোন ভয় নেই। (সমাপ্ত)।
চন্দ্রনাথ ধাম সীতাকুণ্ড।মন্দিরের পুরোহিত খোকন ভট্টাচার্য ও আমি ।

Thursday 31 May 2018

ছড়াঃ- ১৬

ক্ষমা কর তারে
কিশোর দুলাল রায়

 ক্ষমা কর হে প্রভু ক্ষমা কর
পূর্ণ কর তাহার পৃথিবী
কবিতা ছড়ার ছন্দে ছন্দে যিনি
এঁকেছেন দেশের ছবি ।
ক্ষমা কর হে প্রভু ক্ষমা কর
কর তাহারে স্বর্গবাসী
শান্তি প্রিয় মানুষ তিনি
ছিলো মুখে সদাই হাসি ।
ক্ষমা কর হে প্রভু ক্ষমা কর
কর তাহার আত্মার শান্তিদান
আজ নীরব যে কবি
ছিলো সে দেশের গর্বিত প্রাণ ।
ক্ষমা কর হে প্রভু ক্ষমা কর
কর তাহার জীবনের আসান
সে আমাদের প্রিয় কবি
শামসুর রহমান ।।


 বিঃ দ্রঃ ২৮শে আগষ্ট ২০০৬ইং দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ-১৫

কুটুমের বিয়ে
কিশোর দুলাল রায়

কুটুম পাখির বিয়ে হবে
নামলো জোড়ে বৃষ্টি,
বর এলো যে মিষ্টি নিয়ে
হবে নতুন ইষ্টি ।
কুটুম ভাসে চোখের জলে
যাবে শ্বশুর বাড়ি,
টিয়ে দিলো মুক্তো-মালা
ময়না রঙিন হাড়ি ।
দোয়েল নাচে,কোয়েল নাচে
নাচে বাবুই,চড়াই,
মাছ-মাংস সব হচ্ছে রাধা
ভরে লোহার কড়াই ।
শালিক পাখি এলো উড়ে
কোকিল গাইছে ডালে,
বিয়ে বাড়ির ব্যস্ত সবাই
নাচে গানের তালে ।।


বিঃ দ্রঃ এই ছড়াটি ২৭শে মে ২০০৭ইং দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত ।

অসাধারণ প্রতিভা লোকটার


ছড়াঃ- ১৪

আহাজারি
কিশোর দুলাল রায়

 ত্রিশ লক্ষ্য প্রাণের ত্যাগে
পেয়েছিলাম জয়,
এখন কেন বাংলাদেশে
সন্ত্রাসিদের ভয় ।
স্বজন হারা আহাজারি
হয়নি আজও পার,
গুলী খেয়ে মায়ের ছেলে
মরবে কতো আর ।
জীবন নিয়ে আর কতোকাল
চলবে এমন যুদ্ধ,
ছেলে হারা ব্যথায় কাতর
শেষ বয়সে বৃদ্ধ ।
মরণ খেলা এই দেশেতে
চলবে কতো ভাই,
স্বাধীন দেশে বুক ফুলিয়ে
আমরা চলতে চাই ।।

বিঃ দ্রঃ ডিসেম্বর ২০১০ইং জাহাঙ্গীর আলম জাহান সস্পাদিত আড়াঙ্গির ৮ম সংখ্যায় প্রকাশিত ।

Tuesday 29 May 2018

ছড়াঃ- ১৩

ভালোবাসি
কিশোর দুলাল রায়
 ভালোবাসি বাংলা ভাষা
বাংলা মায়ের কোল,
ভালোবাসি ছোট্ট শিশুর
আধো আধো বোল ।
ভালোবাসি ফুল ও পাখি
আমার সোনার দেশ,
ভালোবাসি সবুজ শ্যামল
সবুজ সমাবেশ ।
ভালোবাসি কৃষক ভায়ের
মিষ্টি মুখের হাসি,
ভালোবাসি সোনার ফসল
রাঁখাল ছেলের বাঁশি ।
ভালোবাসি দিবস ও রাত
রাতের জোনাক জ্বলা,
ভালোবাসি আমার মায়ের
বাংলা কথা বলা ।।


 বিঃ দ্রঃ এই ছড়াটি ২০০৮ইং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শিশু বইয়ে ফেব্রুয়ারীয় সংখ্যায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ-১২

চাঁদ তারা সূর্য
কিশোর দুলাল রায়

 রাত পেরিয়ে প্রভাত এলে
সূর্য ওঠে হেসে,
আঁধার নেমে সন্ধ্যা হলে
চাঁদ ওঠে ভেসে ।
অস্তাচলে শেষ হয়ে
চলে গেলে বেলা,
নিঝুম রাতে তারার সাথে
চাঁদ করে খেলা ।
মিটি মিটি তারা জ্বলে
দেখতে লাগে ভালো,
কোথা থেকে চাঁদটা পেল
এতো বেশি আলো ।
চাঁদে গ্রহণ লাগলে পরে
রাত হয়ে যায় কালো,
ভোর হলেই সূর্যি মামা
জ্বালায় আবার আলো ।।

বিঃ দ্রঃ ২০০৬ইং অন্যমাত্রা প্রকাশনার মাসিক মাত্রার কাব্যকথায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ- ১১

বীর প্রতীক
কিশোর দুলাল রায়

তোমরা তো বেঁচে থাকবে
তোমাদের কাজে,
তোমরাই আছ মানুষের
হৃদয়ের মাঝে ।
লড়াই করে গেছো
উঁচু করে শির,
তোমরা ছিলে বাংলাদেশের
মুক্তিযোদ্ধা বীর ।
বুক পেতে নিয়েছিলে
বুলেটের গুলী,
দিয়ে গেছো স্বাধীনতা
আরও বাংলা বুলি ।
তোমরা ছিলে এ দেশের
সাহসী সৈনিক,
তোমাদের স্মরণ করি
আমরা দৈনিক ।
থাকবে তোমরা চিরদিন
লাখো জনতার ভিড়ে,
শোক দিবস হয় পালন
তোমাদেরকে ঘিরে ।।


 বিঃ দ্রঃ এই ছড়াটি ১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১০ইং দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ-১০

বাংলা ভাষা
কিশোর দুলাল রায়

বাংলা আমার লক্ষ্য শহীদের
লক্ষ্য প্রাণের আশা,
বাংলা আমার মমতাময়ী
মায়ের ভালোবাসা ।
ভালো লাগে আমার
মায়ের বাংলা বুলি,
বাংলা আমার নীল আকাশে
রং করা এক তুলি ।
যুদ্ধের কথা শুনলে আমি
দুঃখ পাই নিজে,
বাংলা ভাষায় কথা বলি
 মধুর লাগে কি যে ।
ভাষার জন্য যারা জীবন
করে গেলে দান,
তোমাদের জানাই আমরা
শ্রদ্ধা ও সন্মান ।।

 বিঃ দ্রঃ এই ছড়াটি ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০০৭ইং দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ- ৯

শহীদদের দান
কিশোর দুলাল রায়

ভাষার জন্য জীবন দিলো
ইতিহাসে পাই,
কতো মায়ে ছেলে হারা
কতো বোনে ভাই ।
মিছিল দিয়ে,মিটিং দিয়ে
যুদ্ধ হলো শেষ,
অবশেষে পেলাম আমরা
সোনার বাংলাদেশ ।
ভাষার জন্য জীবন দিলো
ভাষা শহীদদের দান,
জয়ের নেশায় জীবন দিয়ে
রেখেছে দেশের মান ।
ভাষা শহীদদের ত্যাগের কথা
গাথা মনের খাতায়,
থাকবে তাদের নাম চিরদিন
ইতিহাসের পাতায় ।।

 বিঃ দ্রঃ ২০১১ইং ফেব্রুয়ারী মাসে রক্ত জবায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ- ৮

একুশের বেদনা 
কিশোর দুলাল রায় 

 আমি কি ভুলিতে পারি 
একুশে ফেব্রুয়ারী, 
ভাই হারানোর ব্যথা 
আমার ভাইয়ের কথা । 
আমি কি ভুলিতে পারি 
আমাদের গেছে ছাড়ি, 
একুশের কালো রাতে 
অস্ত্র নিয়ে হাতে । 
মায়ের চোখের পানি 
মুছবে না আর জানি, 
আসবে না ভাই ফিরে 
চলে গেছে বহুদুরে । 
স্লোগানে স্লোগানে ভাষার দাবি 
আন্দোলনের ফেব্রুয়ারী, 
ভাইয়ের রক্তে লাল হয়েছে 
আমি কি ভুলিতে পারি ।। 

 বিঃ দ্রঃ ২৩শে ফেব্রুয়ারী ২০১১ইং দৈনিক সংবাদ পত্রিকার খেলাঘর এর পাতায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ- ৭

শরৎ 
কিশোর দুলাল রায় 

 নীল আকাশে ভাসে 
সাদা মেঘের ভেলা, 
পুব আকাশে সূর্য হাসে 
শিশুরা করে খেলা । 
দক্ষিণা বাতাস বহে 
হাওয়ায় দোলে কাঁশফুল, 
স্রোত বহে আপন ধারায় 
নদী হারায় দুই কূল । 
বর্ষার পর শরৎ আসে 
জীবন তোলে জাগিয়ে, 
মিষ্টি মধুর রূপ দিয়ে 
মনকে তোলে সাজিয়ে । 
শারদীয় শরৎ নিশি 
তাঁরায় করে খেলা, 
শরতের আকাশে পূর্ণিমা 
মন করে আত্মভোলা ।। 

 বিঃ দ্রঃ ১১ই সেপ্টেম্বর ২০০৬ইং দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ- ৬

শারদ উৎসব
কিশোর দুলাল রায়

তাকডুমা ডুম তাকডুমা ডুম
ঢুলি বাঁজায় ঢাক,
কার্তিক নাচে,গণেশ নাচে
তাকধিনা ধিন তাক ।
ধিন তাক তাক ধিন তাক তাক
ধিন তাক তাক ধিনা,
লক্ষী বাঁজায় শঙ্খ ধ্বনি
সরস্বতী বীণা ।
তাকধিনা ধিন তাকধিনা ধিন
তাকধিনা ধিন ধিন,
ময়না,টিয়া,বাবুই নাচে
কাল যে পুজোর দিন ।।

 বিঃ দ্রঃ ২০০৯ সালে বর্ণফুলের ৩য় সংখ্যায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ-৫

শারদ সকাল
কিশোর দুলাল রায়

 দক্ষিন হাওয়ায় চাষীর ক্ষেতে
নাচে ধানের ছড়া,
পাখিরা গান গায়
গানে আবেগ ভরা ।
দোয়েলের শিশ্ শুনে
জেগে উঠে ভোরে,
দেখি ছোট্ট পাখিরা
দল বেঁধে উড়ে ।
পাখিদের কিচির মিচির
শুনতে লাগে ভালো,
তখনও সূর্য মামা
ছড়ায় নি আলো ।।

ছড়াঃ-৪

এই দেশে
কিশোর দুলাল রায়

এই দেশে পাখি গায়
কতো গানের সুর,
পলাশের ঐ ডালে কোকিল
ডাকে সুমধুর ।
হই-হুল্লোর করে সবার
কেটে যায় বেলা,
এ দেশের মাটিতে
খেলি কতো খেলা ।
ফুল-ফল,পশু-পাখি
মনকে দেয় দোলা,
সবুজ শ্যামল প্রকৃতি
করে আত্মভোলা ।
বর্ষা এলে ভরে যায়
নদী-নালা জলে,
ঘরের চালে বসে পায়রা
কতো কথা বলে ।।

 বিঃ দ্রঃ এই ছড়াটি ১৩ই নভেম্বর ২০০৬ইং বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ-৩

স্বাধীনতা 
আমার অহংকার
কিশোর দুলাল রায়

 বাংলা আমার ভাইয়ের আঁকা
সবুজ-শ্যামল ছবি,
নদীর মাঝে ঢেউয়ের বুকে
জেগে ওঠা রবি ।
বাংলা আমার মায়ের মুখে
ঘুম পাড়ানি গান,
ভাষার জন্য বুকের ভেতর
শক্ত কঠিন টান ।
বাংলা আমার মুক্ত আকাশ
মুক্ত পাখির নীড়,
স্বাধীন বাংলা পেলাম শেষে
হারিয়ে কতো বীর ।
মাতৃভাষায় কথা বলি
বাংলা মায়ের টানে,
কতো মধুর বুলি শুনি
আমরা গানে গানে ।
বাংলা আমার দেশের মাটির
মায়ের অধিকার,
বাংলাই আমার জন্মভূমি
বাংলাই অহংকার ।।

 বিঃ দ্রঃ এই ছড়াটি ২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০০৭ইং দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত ।

ছড়াঃ-২

একুশে ফেব্রুয়ারী
কিশোর দুলাল রায়

 একুশে ফেব্রুয়ারীর
প্রভাত ফেরির গান,
যখন শুনি,তখন আমার
শিউরে ওঠে প্রাণ ।
যুদ্ধে শহীদ কারো বাবা
কারো আবার ভাই,
তাইতো আজ আমরা সবাই
বিজয়ের গান গাই ।
সেই দিনের কথা শুনলে
মনে দুঃখ পাই,
এসো আজ সবাই মিলে
ফুল দিতে যাই ।।

 বিঃ দ্রঃ ১০ই ফেব্রুয়ারী ২০১০ইং দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় খেলাঘর এর পাতায় প্রকাশিত ।

Monday 28 May 2018

বর্ষাকালে

বিলের জলে শাপলা তোলা যেন সেই হারিয়ে যাওবেলা ছোট্ট বেলা।

ছড়াঃ-১

বৃষ্টি
কিশোর দুলাল রায়

বৃষ্টি পড়ে- ঝিম ঝিমা ঝিম
বৃষ্টি পড়ে- রিম ঝিমা ঝিম।
বৃষ্টি পড়ে- ঝম ঝম
বৃষ্টি পড়ে- ছম ছম ।
বৃষ্টি এল- বর্ষা আসে
বর্ষা এলে নৌকো ভাসে।
বর্ষা এলে ডাকে দেয়া
ফোটে কদম কেয়া,
মাঝি ভিজে কষ্টে পার করে খেয়া ।
জলে ভাসে শাঁপলা
সেও কি আর কম,
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি
নেয় না যে দম ।
দমকা হাওয়ায় বিদ্যুৎ চমকায়
গম গমাগম গম ।

 বিঃদ্রঃ ২৫-০৯-২০০৬ইং দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত
সীতাকুণ্ড,চট্রগ্রাম! ভ্রমন ২০১৮।
ছড়ায় জীবনের প্রথম পুরস্কার। অগ্নি ঝরা মার্চে ছড়ার আগুন সাহিত্য সভায় হুমায়ূন কবির ঢালী, এস এ শামীম, কিশোর দুলাল রায়, আদিত্য রুপু ।

Sunday 27 May 2018

ভাষা শহীদদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
জাফলং, সিলেট।