Friday 1 June 2018

ছড়াঃ- ১৭

বজ্রপাত 
" অধ-পতন "
কিশোর দুলাল রায়

হারিয়ে গেছে মান্যতা আর
হারিয়ে গেছে স্বজন,
বুড়ো বাবার করবে যতন
এমন আছে ক'জন।
গুরুজনদের শ্রদ্ধা-ভক্তি
কমে গেছে আজ,
মা-বাবাকে ছোট করে
চলে অশ্লীল কাজ।
বিচার বৈঠক সবই আছে
সঠিক বিচার নাই,
নেশার জন্য ছেলে ভাবে
টাকা কোথায় পাই।
নেশাগ্রস্ত ছেলে আজ
নেশাগ্রস্ত সমাজ,
ছেলে-মেয়ের দুঃচিন্তায়
বাবার মাথায় বাজ।।

 বিঃদ্রঃ

গল্প, ( দুঃসময়ের বন্ধু )

এই গল্পটি ২৮শে ফেব্রুয়ারী ২০১১ইং ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত ।
গল্পঃ
 " দুঃসময়ের বন্ধু "
কিশোর দুলাল রায়

 শীতের সকাল,কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে আর চারদিক ছেয়ে গেছে ঘন কুয়াশায়,চালের উপর থেকে টুপটাপ ঝরে পড়া শিশিরের ছন্দ আর বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো শেফালী আর বেলী গাছ থেকে ভেসে আসছে সেই ফুলের সুরভিত গন্ধ । ডিসেম্বর মাস স্কুলের বার্ষিক পরিহ্মাও শেষ । তাই স্কুল বন্ধ । ১লা জানুয়ারি থেকে ক্লাস আরম্ভ হবে ।তাই ছুটি কাটাবার জন্য কিশোর,তিথি,দীপা,প্রীতি সবাই মিলে গেলো মামার বাড়ি বেড়াতে । সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সবার নাকের ডগায় এসে পৌঁছালো পিঠাপুলি আর খেজুরের গুড়ের ঘ্রাণ ।দিদি ভাই ওদেরকে ডাকার সাথে সাথেই ওরা বিছানা ছেড়ে আসলো চুলোর পাড়ে । এসে দেখলো মেজো মামী পিঠা বানাচ্ছে আর ওনাকে সাহায্য করছে ওদের ছোট আন্টি নীলা । তারপর ওরা দাঁত ব্রাশ করে হাত-মুখ ধুয়ে আসলো । ওদের মামী সবাইকে পিঠা দিলো । সবাই মিলে খুব আনন্দের সাথে পিঠা খাচ্ছে । এর মধ্যে এলো ওর বড় মামা । এসে উনি কিশোরকে বললেন, ওনার সাথে বাজারে যাওয়ার জন্য।কিশোরও প্রস্তুত । পিঠা খাওয়া শেষে বাজারের ব্যাগ নিয়ে মামা- ভাগিনা মিলে গেল বাজারে । তিথি ওর দিদি ভাইকে বললো গ্রাম ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য। তখন কুয়াশা কেটে পূর্ব দিগন্তে সূর্যের উদয় হয়েছে মাত্র,কিন্তু তখনও ঠাণ্ডা বাতাস তার আপন গতিতেই বইছিলো।দীপা,দিদি আর প্রীতিকে নিয়ে বের হলো তিথি । সড়কের উপর দাঁড়িয়ে তিথি নির্বাক হয়ে দেখতে পেল সবুজের বুকে হলুদে ছেয়ে যাওয়া এক নব দিগন্ত। সরষে ফুলে ছেয়ে আছে কৃষকদের ফসলের মাঠ আর তার ওপরে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছির ঝাকঁ। সড়কের দু'পাশে গাছের ফাঁকে ফোটা হলুদ গাঁদাফুল।তার ওপরে বসেছে প্রজাপতির মেলা । চারদিকে তাকিয়ে তিথির কাছে মনে হলো আজ প্রকৃতির গায়ে হলুদ,তাই হয়তো এতো সাজসজ্জা ।এ রকম সুন্দর দৃশ্য দেখে তিথি তো একেবারে আনন্দে আত্মহারা । প্রীতি,দীপা দিদার সাথে হাঁটছে। তিথি একটু পিছনে পড়ে আছে। কিছু দূর সামনে এগুতেই তিথি সামনের নদীটাকে লহ্ম্য করলো । সেখানে চলছে ছোট ছোট কতগুলো ট্রলার আর জেলেদের কিছু মাছ ধরার নৌকা ।নদীর পাড়ে আরও ছিলো বাতাসের সাথে দোল খাওয়ানো কিছু কাঁশফুল । নৌকায় ওঠার শখ জাগলো তিথির,সাথে সাথে দীপা,প্রীতিও উত্সাহিত হয়ে উঠলো । পরে ওদের দিদা ওদেরকে নিয়ে নৌকায় উঠলো ।নৌকায় উঠতে পেরে ওরাও আনন্দিত ।ঐ দিকে কিশোর বাজার করা শেষে মামার সাথে বাড়ি ফিরলো । ব্যাগে করে মাছ তরিতরকারি আর একটি জগে করে দুধ নিয়ে আসলো । যদিও বাড়িতে গরু ছিলো তবুও বাজার থেকে দুধ আনতে হলো,তার কারণ বাড়িতে যে গরু সেটার এখনো দুধ দেয়ার সময় হয়নি । কিশোরের বড় মামি সদাইগুলো ঘরের ভেতরে নিয়ে রাখলো আর এ সময় ওর দিদা এসে বসলো মাছ কাটতে । সাথে বসলো তিথি । প্রীতিও দীপা বাড়ির আঙ্গিনায় এক্কা-দোক্কা খেলছিল ।এরপর ওরা সবাই গিয়ে নদীতে গোসল করে আসলো ।রান্না শেষে ওদের দিদা ওদেরকে খাওয়ার জন্য ডাকলো । সবাই এসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করলো । দুপুর গড়িয়ে বিকেল,সন্ধ্যা । তারপর রাত হয়ে গেল । রাতের খাবার শেষে ওরা লেপ-কম্বল নিয়ে ঘুমিয়ে রইলো । পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলো কিশোর ।তারপর দেখলো ওদের মামা ওদের জন্য মাটির হাঁড়িতে করে খেজুরের রস নিয়ে এসেছে । মুখ ধুয়ে এসে সবাই রস পান করলো ।পরে ওরা সবাই মনের খুশিতে শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটতে বের হলো ।পথেই তাহের নামে একটি ছেলের সাথে ওদের বন্ধুত্ব হলো ।তাহের কিশোরকে তার বাড়ি নিয়ে গেল । বাড়িতে ছিলো ওর ছোট বোন মরিয়ম ।ওদের বাবা একজন গরীব দিনমজুর । কিশোর,তিথি,দীপা ,প্রীতি ওরা তাহেরের বাড়িতে গিয়ে দেখলো ওরা একটি মাটির তৈরি ছনের দু'চালা ঘরে থাকে । এরপর কিশোর লহ্ম্য করছে তাহের শীতে কাঁপছে ।তা দেখে কিশোর ওর গায়ের সোয়েটার খুলে তাহেরকে পরিয়ে দিলো । তাহের অবশ্য নিতে চাইছিলো না, তবুও কিশোর জোর করেই দিলো। তিথিও ওর গায়ের চাদরটা খুলে দিলো মরিয়মকে । এরপর কিশোর ওর বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা আনলো বন্ধুকে দেওয়ার জন্য । কিন্তু তাহের এটাকে করুণা মনে করে ফিরিয়ে দিতে চাইলো । তার পরে কিশোর অনেক বুঝিয়ে বললো নে না,ব্যবসা করে লাভ হলে না হয় আমার টাকা আমাকে দিয়ে দিবি । এই কথা বলার পর কিশোরের কাছ থেকে তাহের হাসি মুখে টাকাটা নিলো । সেই টাকা দিয়ে জমিতে ফসল ফলিয়ে ওদের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসলো । দূর হয়ে গেল ওদের দুঃখ । পরে তাহের কিশোরকে ওর দেয়া টাকা ফিরিয়ে দিলো । আর দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য প্রকৃত বন্ধু বানিয়ে নিলো । কিশোরও তখন বুঝতে পারলো শুধু নেয়াতে না,মানুষকে কিছু দিতে পারাটাও যে কতো আনন্দের । ছুটি শেষ,তাই ওরা মামার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে সবাই বাসায় ফিরে গেল ।
                                                   Sr.dulalray@yahoo.com

গল্প, ( বর্ষাকালে )

এই গল্পটি ১৯শে জুলাই ২০১০ইং দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত ।
গল্প
★বর্ষাকালে★
 কিশোর দুলাল রায়

চারোদিকে বর্ষার অথই জোয়ারের জল।সেই জলে ভাসে কুটি কুটি হয়ে ঝরা হাজারো কদমের ফুল।আর ভেসে বেড়ায় সরু গলা তুলে রাজ হাঁসের পাল।বর্ষার জল দিয়েই নৌকা নিয়ে স্কুলে গেল রবি,চৈতালী,ও অর্চনা । গিয়ে দেখলো মনি আজও স্কুলে আসেনি।স্কুল ছুটি হবার পর রবি,চৈতালী ও অর্চনা নৌকায় এসে বসলো।এখন বর্ষাকাল তাই নৌকাটি স্কুলের সামনে একটি বড় সৃষ্টি গাছের নিচে মাঠেই বাধা ছিলো।ওরা বসে আছে শান্তর আসার অপেক্ষায়। আজ শনিবার,গাঁয়ে হাট-বাজার মিলেছে আজ। তাই শান্ত স্কুল ছুটি হবার পর গিয়েছে ওর মামার কাছে কিছু বাজার-সদাই কিনে আনার জন্য । অবশেষে শান্ত বাজার-সদাই করে নিয়ে আসলো নৌকার কাছে।সদাইগুলো নৌকার মধ্যে নামিয়ে রাখলো।আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে।যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে।তাই চৈতালী শান্তকে বলে জলদি করে আয় তা না হলে যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে।তাই চৈতালী শান্তকে বলে জলদি করে আয় তা না হলে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে।ওই দিকে রবিটা আবার বাজারে গিয়েছে আঁখ কিনে আনার জন্য । তাই আবারো রবির জন্য বসে থাকা।মনি,রবি,চৈতালী,অর্চনা,শান্ত এরা সবাই একে অন্যের ক্লাসমেট । রবিটার আসতে দেরি দেখে অর্চনা শান্তকে বলে,আমাকে একটি অংক খাতা এনে দেনা।কি আর করা শান্ত যাচ্ছে খাতা কিনতে।যাবার সময় চৈতালীও বলে দিলো,শান্ত আসার সময় সাথে একটি পলিথিন ব্যাগ আনিস যদি বৃষ্টি আসে।পথের মধ্যেই দেখা হলো শান্তর সাথে রবির।আঁখ নিয়ে আসছিলো রবি।শান্ত বলে তুই নৌকায় গিয়ে বস আমি আসছি।রবি চলে গেল নৌকায় আর শান্ত খাতা আনতে।অতঃপর এলো শান্ত উঠলো নৌকায় । রবি নৌকার বান খুলে নৌকা ছাড়লো । নদীর কূল ঘেঁষে নৌকা বাইতে লাগলো শান্ত।সামনে বৈঠা টানছে রবি।অর্চনা আর চৈতালী নৌকার মাঝে মাচায় বসে আছে।ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি ঝরছে।চৈতালী পলিথিন ব্যাগে বইগুলো ভরে রাখলো।তারপর সামনেই বর্ষার জোয়ারের জলে ভাসা শাঁপলাগুলো দেখতে পেল।অর্চনার সখ জাগলো শাঁপলা তোলার সাথে চৈতালীরও।দু'জনেই শাঁপলা তোলার জন্য উৎসাহিত হয়ে উঠলো।এরপর নৌকায় বসেই যে যার ইচ্ছে মতো শাঁপলা তুলে নিলো।শাঁপলাগুলো ছিলো বেশ বড় আর মোটা,তাই ওরা সবাই খুব আনন্দ অনুভব করলো।অর্চনা একটি শাঁপলা হাতে নিয়ে মালা তৈরি করলো।খানিক বাদেই ওরা এসে পৌছালো মাঝ নদীতে । অনেক জোরে প্রবল বেগে বাতাস ছাড়লো।নদীতে প্রচুর ঢেউ।রবি,অর্চনা আর চৈতালীকে উদ্দেশ্য করে বলে এখন যদি নৌকা ডুবে যায়।এই কথাটা শুনতেই ধক করে কেঁপে উঠলো চৈতালীর বুকটা।কারণ সে সাতার জানে না।যদি সত্যিই ডুবে যায় তাহলে উপায় কি? এরই মধ্যে কোথা এক ঢেউ এসে ওদের নৌকার সাথে ধাক্কা খেয়ে বয়ে গেল ওদের মাথার উপর দিয়ে।চৈতালী ভয়ে কেঁদে ফেললো।অর্চনা এসে ওকে ধরে বসলো।রবি আর শান্ত চৈতালীকে সান্তনা দিয়ে বললো,আরে তুই কাঁদছিস কেন? আমরা আছি না কিছুই হবে না তোতোর।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পাড়ে চলে যাব।চৈতালী কিছুটা আশ্বাস পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।শান্ত আর রবি আরও জোরে বৈঠা বাইতে লাগলো কিন্তুু বাতাসের জন্য ওরা নৌকা নিয়ে সামনে এগুতে পারছিলো না।জোরে বৃর্ষ্টি হওয়াতে ওদের নৌকায় প্রচুর পানি জমে গেল যা সেচার জন্য কোন পাত্র ওদের নৌকায় ছিলো না।যার কারণে নদীটি পার হবার পর বাড়ির পাশে কোমর জলে এসে নৌকাটি ডুবে গেল।রবি,শান্ত,অর্চনা,চৈতালীকে টেনে এনে শুকনা জায়গায় দাঁড় করালো।বাড়ি থেকে মনি এসব দেখতে পেল আর বাড়ি থেকে একটি পানি সেচার পাত্র নিয়ে গেল ওদের সাহায্য করার জন্য।তারপর নৌকার পানি সেচা শেষে ওরা নৌকা নিয়ে ডাঙ্গায় ফিরে এলো।সবাই কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নিলো।রাতে চৈতালীর ভীষণ জ্বর ওঠলো।রবি,শান্ত,অর্চনা এদের সবার হাঁচি আর সর্দি লেগে গেল।ডাক্তারের ওষুদ খেয়ে ওরা ভালো হলো।তারপর সবাই মিলে চৈতালীকে সাঁতার শেখালো।যাতে করে পানিতে গিয়ে আর কোনদিন কোন বিপদের সম্মুখীন হতে না হয়।সাঁতার শিখে চৈতালীর মন থেকেও পানিতে নামার ভয় দূর হলো।এখন আর নদীর পানিতে নামতে ওর কোন বাধা নেই।প্রতিদিন সবাই একসাথে নৌকা নিয়ে স্কুলে যায়।এখন ওরা বর্ষার বৃর্ষ্টি , ঝড়,বাতাস সব কিছুই জয় করতে পারে।এর কারণ ওদের মনে আর আগের মতো কোন ভয় নেই। (সমাপ্ত)।
চন্দ্রনাথ ধাম সীতাকুণ্ড।মন্দিরের পুরোহিত খোকন ভট্টাচার্য ও আমি ।