Friday 1 June 2018

গল্প, ( বর্ষাকালে )

এই গল্পটি ১৯শে জুলাই ২০১০ইং দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত ।
গল্প
★বর্ষাকালে★
 কিশোর দুলাল রায়

চারোদিকে বর্ষার অথই জোয়ারের জল।সেই জলে ভাসে কুটি কুটি হয়ে ঝরা হাজারো কদমের ফুল।আর ভেসে বেড়ায় সরু গলা তুলে রাজ হাঁসের পাল।বর্ষার জল দিয়েই নৌকা নিয়ে স্কুলে গেল রবি,চৈতালী,ও অর্চনা । গিয়ে দেখলো মনি আজও স্কুলে আসেনি।স্কুল ছুটি হবার পর রবি,চৈতালী ও অর্চনা নৌকায় এসে বসলো।এখন বর্ষাকাল তাই নৌকাটি স্কুলের সামনে একটি বড় সৃষ্টি গাছের নিচে মাঠেই বাধা ছিলো।ওরা বসে আছে শান্তর আসার অপেক্ষায়। আজ শনিবার,গাঁয়ে হাট-বাজার মিলেছে আজ। তাই শান্ত স্কুল ছুটি হবার পর গিয়েছে ওর মামার কাছে কিছু বাজার-সদাই কিনে আনার জন্য । অবশেষে শান্ত বাজার-সদাই করে নিয়ে আসলো নৌকার কাছে।সদাইগুলো নৌকার মধ্যে নামিয়ে রাখলো।আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে।যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে।তাই চৈতালী শান্তকে বলে জলদি করে আয় তা না হলে যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে।তাই চৈতালী শান্তকে বলে জলদি করে আয় তা না হলে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে।ওই দিকে রবিটা আবার বাজারে গিয়েছে আঁখ কিনে আনার জন্য । তাই আবারো রবির জন্য বসে থাকা।মনি,রবি,চৈতালী,অর্চনা,শান্ত এরা সবাই একে অন্যের ক্লাসমেট । রবিটার আসতে দেরি দেখে অর্চনা শান্তকে বলে,আমাকে একটি অংক খাতা এনে দেনা।কি আর করা শান্ত যাচ্ছে খাতা কিনতে।যাবার সময় চৈতালীও বলে দিলো,শান্ত আসার সময় সাথে একটি পলিথিন ব্যাগ আনিস যদি বৃষ্টি আসে।পথের মধ্যেই দেখা হলো শান্তর সাথে রবির।আঁখ নিয়ে আসছিলো রবি।শান্ত বলে তুই নৌকায় গিয়ে বস আমি আসছি।রবি চলে গেল নৌকায় আর শান্ত খাতা আনতে।অতঃপর এলো শান্ত উঠলো নৌকায় । রবি নৌকার বান খুলে নৌকা ছাড়লো । নদীর কূল ঘেঁষে নৌকা বাইতে লাগলো শান্ত।সামনে বৈঠা টানছে রবি।অর্চনা আর চৈতালী নৌকার মাঝে মাচায় বসে আছে।ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি ঝরছে।চৈতালী পলিথিন ব্যাগে বইগুলো ভরে রাখলো।তারপর সামনেই বর্ষার জোয়ারের জলে ভাসা শাঁপলাগুলো দেখতে পেল।অর্চনার সখ জাগলো শাঁপলা তোলার সাথে চৈতালীরও।দু'জনেই শাঁপলা তোলার জন্য উৎসাহিত হয়ে উঠলো।এরপর নৌকায় বসেই যে যার ইচ্ছে মতো শাঁপলা তুলে নিলো।শাঁপলাগুলো ছিলো বেশ বড় আর মোটা,তাই ওরা সবাই খুব আনন্দ অনুভব করলো।অর্চনা একটি শাঁপলা হাতে নিয়ে মালা তৈরি করলো।খানিক বাদেই ওরা এসে পৌছালো মাঝ নদীতে । অনেক জোরে প্রবল বেগে বাতাস ছাড়লো।নদীতে প্রচুর ঢেউ।রবি,অর্চনা আর চৈতালীকে উদ্দেশ্য করে বলে এখন যদি নৌকা ডুবে যায়।এই কথাটা শুনতেই ধক করে কেঁপে উঠলো চৈতালীর বুকটা।কারণ সে সাতার জানে না।যদি সত্যিই ডুবে যায় তাহলে উপায় কি? এরই মধ্যে কোথা এক ঢেউ এসে ওদের নৌকার সাথে ধাক্কা খেয়ে বয়ে গেল ওদের মাথার উপর দিয়ে।চৈতালী ভয়ে কেঁদে ফেললো।অর্চনা এসে ওকে ধরে বসলো।রবি আর শান্ত চৈতালীকে সান্তনা দিয়ে বললো,আরে তুই কাঁদছিস কেন? আমরা আছি না কিছুই হবে না তোতোর।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পাড়ে চলে যাব।চৈতালী কিছুটা আশ্বাস পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।শান্ত আর রবি আরও জোরে বৈঠা বাইতে লাগলো কিন্তুু বাতাসের জন্য ওরা নৌকা নিয়ে সামনে এগুতে পারছিলো না।জোরে বৃর্ষ্টি হওয়াতে ওদের নৌকায় প্রচুর পানি জমে গেল যা সেচার জন্য কোন পাত্র ওদের নৌকায় ছিলো না।যার কারণে নদীটি পার হবার পর বাড়ির পাশে কোমর জলে এসে নৌকাটি ডুবে গেল।রবি,শান্ত,অর্চনা,চৈতালীকে টেনে এনে শুকনা জায়গায় দাঁড় করালো।বাড়ি থেকে মনি এসব দেখতে পেল আর বাড়ি থেকে একটি পানি সেচার পাত্র নিয়ে গেল ওদের সাহায্য করার জন্য।তারপর নৌকার পানি সেচা শেষে ওরা নৌকা নিয়ে ডাঙ্গায় ফিরে এলো।সবাই কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নিলো।রাতে চৈতালীর ভীষণ জ্বর ওঠলো।রবি,শান্ত,অর্চনা এদের সবার হাঁচি আর সর্দি লেগে গেল।ডাক্তারের ওষুদ খেয়ে ওরা ভালো হলো।তারপর সবাই মিলে চৈতালীকে সাঁতার শেখালো।যাতে করে পানিতে গিয়ে আর কোনদিন কোন বিপদের সম্মুখীন হতে না হয়।সাঁতার শিখে চৈতালীর মন থেকেও পানিতে নামার ভয় দূর হলো।এখন আর নদীর পানিতে নামতে ওর কোন বাধা নেই।প্রতিদিন সবাই একসাথে নৌকা নিয়ে স্কুলে যায়।এখন ওরা বর্ষার বৃর্ষ্টি , ঝড়,বাতাস সব কিছুই জয় করতে পারে।এর কারণ ওদের মনে আর আগের মতো কোন ভয় নেই। (সমাপ্ত)।

No comments:

Post a Comment