এই গল্পটি ২৮শে ফেব্রুয়ারী ২০১১ইং ইনকিলাব
পত্রিকায় প্রকাশিত ।
গল্পঃ
" দুঃসময়ের বন্ধু "
কিশোর দুলাল রায়
শীতের সকাল,কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস
বইছে আর চারদিক ছেয়ে গেছে ঘন
কুয়াশায়,চালের উপর থেকে টুপটাপ
ঝরে পড়া শিশিরের ছন্দ আর বাড়ির
আঙ্গিনায় লাগানো শেফালী আর
বেলী গাছ
থেকে ভেসে আসছে সেই ফুলের
সুরভিত গন্ধ ।
ডিসেম্বর মাস স্কুলের বার্ষিক
পরিহ্মাও শেষ । তাই স্কুল বন্ধ ।
১লা জানুয়ারি থেকে ক্লাস আরম্ভ
হবে ।তাই ছুটি কাটাবার জন্য
কিশোর,তিথি,দীপা,প্রীতি সবাই
মিলে গেলো মামার বাড়ি
বেড়াতে ।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সবার
নাকের ডগায়
এসে পৌঁছালো পিঠাপুলি আর
খেজুরের গুড়ের ঘ্রাণ ।দিদি ভাই
ওদেরকে ডাকার সাথে সাথেই
ওরা বিছানা ছেড়ে আসলো চুলোর
পাড়ে ।
এসে দেখলো মেজো মামী পিঠা বানাচ্ছে আর
ওনাকে সাহায্য করছে ওদের ছোট
আন্টি নীলা । তারপর ওরা দাঁত ব্রাশ
করে হাত-মুখ ধুয়ে আসলো ।
ওদের মামী সবাইকে পিঠা দিলো ।
সবাই মিলে খুব আনন্দের
সাথে পিঠা খাচ্ছে ।
এর মধ্যে এলো ওর বড় মামা ।
এসে উনি কিশোরকে বললেন,
ওনার সাথে বাজারে যাওয়ার
জন্য।কিশোরও প্রস্তুত ।
পিঠা খাওয়া শেষে বাজারের
ব্যাগ নিয়ে মামা-
ভাগিনা মিলে গেল বাজারে ।
তিথি ওর দিদি ভাইকে বললো গ্রাম
ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য।
তখন কুয়াশা কেটে পূর্ব
দিগন্তে সূর্যের উদয়
হয়েছে মাত্র,কিন্তু তখনও
ঠাণ্ডা বাতাস তার আপন গতিতেই
বইছিলো।দীপা,দিদি আর
প্রীতিকে নিয়ে বের হলো তিথি ।
সড়কের উপর দাঁড়িয়ে তিথি নির্বাক
হয়ে দেখতে পেল সবুজের
বুকে হলুদে ছেয়ে যাওয়া এক নব
দিগন্ত।
সরষে ফুলে ছেয়ে আছে কৃষকদের
ফসলের মাঠ আর তার ওপরে মধু
আহরণে ব্যস্ত মৌমাছির ঝাকঁ। সড়কের
দু'পাশে গাছের ফাঁকে ফোটা হলুদ
গাঁদাফুল।তার
ওপরে বসেছে প্রজাপতির মেলা ।
চারদিকে তাকিয়ে তিথির
কাছে মনে হলো আজ প্রকৃতির
গায়ে হলুদ,তাই
হয়তো এতো সাজসজ্জা ।এ রকম সুন্দর দৃশ্য
দেখে তিথি তো একেবারে আনন্দে আত্মহারা ।
প্রীতি,দীপা দিদার সাথে হাঁটছে।
তিথি একটু পিছনে পড়ে আছে। কিছু দূর
সামনে এগুতেই তিথি সামনের
নদীটাকে লহ্ম্য করলো ।
সেখানে চলছে ছোট ছোট
কতগুলো ট্রলার আর জেলেদের কিছু
মাছ ধরার নৌকা ।নদীর পাড়ে আরও
ছিলো বাতাসের সাথে দোল
খাওয়ানো কিছু কাঁশফুল ।
নৌকায় ওঠার শখ
জাগলো তিথির,সাথে সাথে দীপা,প্রীতিও
উত্সাহিত হয়ে উঠলো ।
পরে ওদের
দিদা ওদেরকে নিয়ে নৌকায়
উঠলো ।নৌকায় উঠতে পেরে ওরাও
আনন্দিত ।ঐ দিকে কিশোর বাজার
করা শেষে মামার
সাথে বাড়ি ফিরলো ।
ব্যাগে করে মাছ তরিতরকারি আর
একটি জগে করে দুধ নিয়ে আসলো ।
যদিও বাড়িতে গরু ছিলো তবুও
বাজার থেকে দুধ আনতে হলো,তার
কারণ বাড়িতে যে গরু সেটার
এখনো দুধ দেয়ার সময় হয়নি ।
কিশোরের বড় মামি সদাইগুলো ঘরের
ভেতরে নিয়ে রাখলো আর এ সময় ওর
দিদা এসে বসলো মাছ কাটতে ।
সাথে বসলো তিথি ।
প্রীতিও দীপা বাড়ির আঙ্গিনায়
এক্কা-দোক্কা খেলছিল ।এরপর
ওরা সবাই গিয়ে নদীতে গোসল
করে আসলো ।রান্না শেষে ওদের
দিদা ওদেরকে খাওয়ার জন্য
ডাকলো ।
সবাই এসে খাওয়া-দাওয়া শেষ
করলো ।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল,সন্ধ্যা । তারপর
রাত হয়ে গেল ।
রাতের খাবার শেষে ওরা লেপ-কম্বল
নিয়ে ঘুমিয়ে রইলো ।
পরদিন সকালে ঘুম
থেকে উঠলো কিশোর ।তারপর
দেখলো ওদের মামা ওদের জন্য
মাটির হাঁড়িতে করে খেজুরের রস
নিয়ে এসেছে । মুখ ধুয়ে এসে সবাই রস
পান করলো ।পরে ওরা সবাই মনের
খুশিতে শিশির ভেজা ঘাসের উপর
দিয়ে হাঁটতে বের হলো ।পথেই
তাহের নামে একটি ছেলের
সাথে ওদের বন্ধুত্ব হলো ।তাহের
কিশোরকে তার বাড়ি নিয়ে গেল ।
বাড়িতে ছিলো ওর ছোট বোন মরিয়ম
।ওদের বাবা একজন গরীব দিনমজুর ।
কিশোর,তিথি,দীপা
,প্রীতি ওরা তাহেরের
বাড়িতে গিয়ে দেখলো ওরা একটি মাটির
তৈরি ছনের দু'চালা ঘরে থাকে ।
এরপর কিশোর লহ্ম্য করছে তাহের
শীতে কাঁপছে ।তা দেখে কিশোর ওর
গায়ের সোয়েটার
খুলে তাহেরকে পরিয়ে দিলো ।
তাহের অবশ্য নিতে চাইছিলো না,
তবুও কিশোর জোর করেই দিলো।
তিথিও ওর গায়ের
চাদরটা খুলে দিলো মরিয়মকে ।
এরপর কিশোর ওর বাবার কাছ
থেকে কিছু
টাকা আনলো বন্ধুকে দেওয়ার জন্য ।
কিন্তু তাহের
এটাকে করুণা মনে করে ফিরিয়ে দিতে চাইলো ।
তার পরে কিশোর অনেক
বুঝিয়ে বললো নে না,ব্যবসা করে লাভ
হলে না হয় আমার
টাকা আমাকে দিয়ে দিবি ।
এই কথা বলার পর কিশোরের কাছ
থেকে তাহের
হাসি মুখে টাকাটা নিলো ।
সেই টাকা দিয়ে জমিতে ফসল
ফলিয়ে ওদের সংসারে আর্থিক
সচ্ছলতা ফিরে আসলো ।
দূর হয়ে গেল ওদের দুঃখ ।
পরে তাহের কিশোরকে ওর
দেয়া টাকা ফিরিয়ে দিলো ।
আর দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়ানোর
জন্য প্রকৃত বন্ধু বানিয়ে নিলো ।
কিশোরও তখন বুঝতে পারলো শুধু
নেয়াতে না,মানুষকে কিছু
দিতে পারাটাও যে কতো আনন্দের ।
ছুটি শেষ,তাই ওরা মামার
বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে সবাই
বাসায় ফিরে গেল ।
Sr.dulalray@yahoo.com
গল্পটি ভালো লাগলে সবাই লাইক ও কমেন্ট করুণ।
ReplyDelete